এই মুহূর্তে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের (ড্রিমলাইনার) ওয়ানওয়ে টিকিট কিনতেই বিদেশগামীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা। চাকরি বাঁচাতে নির্ধারিত দিনের টিকিট কেনার জন্য তারা বলাকা ভবনে গেলে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট দেশে প্রবেশের অনুমোদন নেয়ার সার্টিফিকেটের পাশাপাশি করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার জন্য পাঠানো হচ্ছে পৃথক দু’টি ল্যাবে। অবশ্য দুবাইগামী ফ্লাইট যাত্রীদের ক্ষেত্রে অ্যাপ্রুভাল বাধ্যতামূলক থাকার পাশাপাশি করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট শুধু লাগছে একবারই। হতাশাগ্রস্ত এসব বিদেশগামী বলছেন, এমনিতেই তারা দীর্ঘদিন দেশে থেকেই বেকার হয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কটে রয়েছেন। তার ওপর বিদেশে যেতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে তাদের টিকিট ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তারা। মতিঝিলের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বলাকা ভবন কার্যালয়ে খোঁজ নিতে গেলে গতকাল শনিবার দুপুরে হতাশাগ্রস্ত বিদেশগামীদের সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা কিছু যাত্রী পাসপোর্ট, রিটার্ন টিকিট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে সংশ্লিষ্ট টিকিট কাউন্টারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদেশ যাওয়ার জন্য দাঁড়াচ্ছেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট ডেস্কের কর্মকর্তারা যাত্রীদের বিদেশ যেতে করণীয় সম্পর্কে ব্রিফ দিতে দেখা যায়। যাত্রীদের সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ সময় কর্মকর্তাদের কথা শুনে অনেককেই টিকিট কাটার পরিবর্তে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। এর মধ্যে কারো কারো টিকিট এয়ার অ্যারাবিয়াসহ অন্যান্য এয়ারলাইন্সের কেনা থাকায় তাদেরকে পড়তে হয়েছে নতুন ঝামেলায়। এর সাথে যোগ হয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে নিজ উদ্যোগে অ্যাপ্রুভাল নিয়ে আসা ও করোনা সার্টিফিকেট পরীক্ষার সনদ গ্রহণের বাড়তি ঝামেলা। সবমিলিয়ে বিদেশগামী শ্রমিকদের অনেকেই এখন দিশেহারা। কী করবেন তারা ?
দুবাইগামী যাত্রী মিজান টিকিট ক্রয় করার জন্য ফেনীর দাগনভূঞা থেকে এসেছেন। পাসপোর্ট, এয়ার অ্যারাবিয়া এয়ারলাইন্সের ফিরতি টিকিট ও অ্যাপ্রুভালের কাগজ হাতে নিয়েই তিনি কাউন্টারে দাঁড়ান। ১০ আগস্টের টিকিট কিনতে চাইলে তাকে ওয়ানওয়ে ইকোনমি ক্লাসের টিকিটের দাম জানানো হয় ৮১ হাজার টাকা। দাম এতো কেন জানতে চাইলে বলা হয়, করোনার কারণে এখন টিকিটের দাম একটু বেশি। আর ১০ আগস্টের ফ্লাইটের এমনিতেও সিট নেই। কমানোর কোনো সুযোগ নেই। পরে যাত্রী এত টাকা দিয়ে তার পক্ষে টিকিট কাটা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে তিনি ফিরে যান। একইভাবে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা আবুধাবিগামী ফ্লাইটের যাত্রী মনির কাউন্টারে বিমানের রিটার্ন টিকিট সাথে নিয়ে দাঁড়ালে তাকে জানানো হয়, নির্ধারিত দিনের টিকিট কাটতে হলে ওই দেশে প্রবেশের অ্যাপ্রুভাল আনতে হবে। এরপর করোনা টেস্ট পরীক্ষার দু’টি রেজাল্ট নেগেটিভ রিপোর্ট এলে তখন তাকে টিকিট কনফার্ম করে দেয়া হবে। পরে তিনিও সময়মতো করে আনবেন বলে ফিরে যান।
বিমানের বলাকা ভবনে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ভুক্তভোগী দুবাইগামী যাত্রী মিজান ও আবুধাবিগামী যাত্রী মনিরের সাথে।
মিজান বলেন, আমি ছুটিতে এসে আটকা পড়ি। দুবাই থেকে এয়ার অ্যারাবিয়ার টিকিট কেটেই এসেছিলাম। ট্রাভেল এজেন্সির লোক আমাকে বলেছিল, দুই দিন পরই ফ্লাইট চালু হবে। তখন আমি যেতে পারব। কিন্তু এখন ওই ফ্লাইট চালু না হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছি। এখন বিমানের ফ্লাইটে দুবাই যেতে টিকিট কাটতে এসেছিলাম। কিন্তু ৩২-৩৩ হাজার টাকার টিকিটের দাম চাচ্ছেন ৮১ হাজার। অথচ একদিন আগেও আমার কাছে টেলিফোনে টিকিটের দাম চেয়েছিল ৭০ হাজার টাকা। আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা দিয়ে কিভাবে বিদেশ যামু। সাথে করোনা সনদ নিতে আমার আরো ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হবে। সরকারের তো উচিত এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা। এরপরই তিনি আবার কাউন্টারে গিয়ে কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, টিকিট কেনার পর যদি করোনা পজিটিভ রিপোর্ট চলে আসে তখন কি হবে? আমার টিকিট কি বাতিল হয়ে যাবে? তখন তাকে জানানো হয়, না রিপোর্ট যদি পজিটিভ আসে তাহলে তার কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে পাসপোর্ট ও টিকিট পাঠালে ওই টিকিট ক্যানসেল করে দেয়া হবে। সুস্থ হলে পরবর্তীতে তাকে আবার নতুন তারিখের টিকিট ইস্যু করা হবে। করোনা সার্টিফিকেট একবারই লাগবে।
বিদেশগামী আরেক প্রবাসী গোপালগঞ্জের বাসিন্দা মনির বলেন, আমি বিমানের টিকিটেই দেশে এসেছি। ১৬ আগস্ট আবার যেতে আজ কনফার্ম করতে এসেছি। কিন্তু তারা আমাকে দুই মেডিক্যাল ল্যাব থেকে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসতে বলছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি পরপর তিনবার চেষ্টা করেছি অনলাইনে ঢুকে আবুধাবি যেতে অ্যাপ্রুভাল আনার জন্য। কিন্তু প্রতিবারই রিজেক্ট আসে। এর মধ্যে গ্রামে করেছিলাম একবার। ঢাকায় এসে বিমান অফিসের পাশের একটি দোকানে ও আরেকবার ট্রাভেল এজেন্সি থেকে করানোর চেষ্টা করেছি। প্রতিবারই রিজেক্ট উত্তর আসছে। যাক আমাকে তারা ৪টি মেডিক্যাল সেন্টারের নাম দিয়ে বলেছেন, এর যেকোনো একটি থেকে টেস্ট করাতে। এরপর মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেট থেকে আরেকটি করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে। এখন আমি ১৪ আগস্ট রিপোর্ট করাতে যাবো। ১৫ আগস্ট এখানে রিপোর্ট নিয়ে আসব। ফিট হলে আমাকে ১৬ তারিখের ফ্লাইটে উঠার টিকিট কনফার্ম করে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বিমান অফিসের কাউন্টার থেকে আগত আবুধাবিগামী যাত্রীদের ৪টি ল্যাবের যেগুলো থেকে পরীক্ষা করাতে বলা হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে বায়োম্যাড ডায়াগনস্টিকস, ডিএমএফআর মোলেকুলার ল্যাব বিডি, ডিএনএ সলিউশন লিমিটেড (ল্যাব অ্যান্ড কালেকশন পয়েন্ট ০১) ডিএনএ সলিউশন লিমিটেড (ল্যাব অ্যান্ড কালেকশন পয়েন্ট ০২। এ ছাড়াও মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে স্থাপিত ল্যাব থেকে।
এ সময় কুয়েতগামী এক যাত্রী কাউন্টারে টিকিটের জন্য দাঁড়ালে তাকে জানানো হয় আপাতত কুয়েতের ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। ফেনী থেকে আসা যাত্রী মিজান এ প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে বলেন, টিকিটের মূল্য যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে আমরা কিভাবে বিদেশে যাবো? আমরা তো বিদেশ থেকে টাকা পাঠাই। যদি নাই যেতে পারি তাহলে আমাদের মরণ ছাড়া আর উপায় নেই।
Leave a Reply